সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
ঐতিহ্যবাহী রেশম শিল্পের ব্যাপক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সনে নাটোর গণভবনে বঙ্গবন্ধূ কর্তৃক স্বতন্ত্র রেশম বোর্ড প্রতিষ্ঠার ধারণার সূত্র ধরে ১৯৭৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর ৬২ নং অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেশম বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। চেয়ারম্যান ছিলেন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র বিমোচন ও আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানোই এ সংস্থার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বোর্ড এ শিল্পের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে দেশে রেশম শিল্পের ব্যাপক পরিচিতি ও অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বর্তমানে দেশে এ শিল্পের সংগে জড়িত লোকসংখ্যা প্রায় ৬.৫০ লক্ষ। বোর্ড সৃষ্টির পূর্বে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৫ হাজার। বিজড়িত জনবলের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগই গ্রামীণ দুঃস্থ মহিলা।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর রেশম চাষ সর্ম্পকৃত কার্যক্রম শিল্প মন্ত্রণালয় এর নিয়ন্ত্রনে পরিচালিত হতো। ১৯৬১-৬২ সাল থেকে ডিসেম্বর ১৯৭৭ পর্যন্ত রেশম চাষ কার্যক্রম ইপসিক (বর্তমানে বিসিক) এর নিয়ন্ত্রনে ছিল। ১৯৭৭ সালের ২৪শে ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির ৬২ নং অধ্যাদেশ বলে বাংলাদেশ রেশম বোর্ড গঠিত হয়। ফেব্রুয়ারী/১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ রেশম বোর্ড কার্যক্রম শুরু করে।
দেশ ব্যাপী রেশম চাষ ব্যাপক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ০৭/০৩/২০১৩ ইং তারিখে ১৩ নং আইনবলে বাংলাদেশ রেশম বোর্ড, বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউট এবং বাংলাদেশ সিল্ক ফাউন্ডেশনকে একীভূত করে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়। নবগঠিত রেশম উন্নয়ন বোর্ডের ১৪ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, মাননীয় মন্ত্রী, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। সচিব, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিচালনা পর্ষদের ভাইচ চেয়ারম্যান। ইহা ছাড়াও জাতীয় সংসদের মাননীয় সংসদ সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকবৃন্দ এবং রেশম চাষ ও শিল্পের সহিত সম্পৃক্ত প্রতিনিধি সমন্বয়ে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদ গঠণ করা হয়েছে। মহাপরিচালক বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সচিব। বোর্ডের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মোট ৪টি বিভাগ রয়েছে; যথাঃ- (১) প্রশাসন ও সংস্থাপন বিভাগ, (২) অর্থ ও পরিকল্পনা বিভাগ, (৩) সম্প্রসারণ ও প্রেষণা বিভাগ এবং (৪) উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বিভাগ। এ ছাড়াও গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউটসহ এমআইএস সেল, নিরীক্ষা শাখা, জনসংযোগ শাখা সরাসরি মহাপরিচালকের অধীনে ন্যাস্ত রয়েছে। বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের নুতন অর্গানোগ্রাম প্রণয়নের বিষয়টি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
উদ্দেশ্য
- বাংলাদেশে রেশম চাষ ও শিল্পের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন ;
- গুনগতমান রেশম গুটি ও রেশম সুতার উৎপাদন বৃদ্ধি;
- রেশম চাষ ও শিল্পের বিভিন্ন পর্যায়ে কারীগরী প্রশিক্ষনের মাধ্যমে রেশম সেক্টরে দক্ষ জনবল গড়ে তোলা;
- বেকার জনগোষ্ঠী বিশেষ করে মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি;
- দারিদ্র বিমোচন এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠির আর্থ সামাজিক উন্নয়ন;
- মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন।
পটভূমি
চীনকে রেশমের জন্মভূমি বলা হয়৷ দীর্ঘ ২৫০০ বছর রেশম চাষের পদ্ধতি তারা গোপন রাখলেও তা ভারতবর্ষসহ অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে৷ ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীর মোঘল আমলে ভারতে প্রচুর রেশম উত্পাদিত হ’তো ৷ নবাব আমলে তত্কালীন বৃহত্তর বাংলাদেশে রেশম উত্পাদনে যথেষ্ট উন্নতি হয়৷ বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ১৯১৪ সালে বাংলাদেশে রেশম উন্নয়নের জন্য আলাদা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়৷ ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ভাগে দু’টি রেশম বীজাগার এবং কিছু বেসরকারী রেশম অধ্যুাষিত এলাকা পড়ে বীজাগার দু’টো বগুড়া ও মীরগঞ্জে (রাজশাহীতে) অবস্থিত ৷ বেসরকারী রেশম উত্পাদন এলাকা ছিল ভোলাহাট (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) ও মীরগঞ্জে৷ ১৯৪৭ সালের পাক ভারত বিভক্তির পর ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রেশম কার্যক্রম শিল্প ও বাণিজ্য বিভাগের অধীনে ন্যস্ত ছিল৷ ১৯৬০-৬১ সালে রেশম কার্যক্রম ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্হা (ইপসিক)র অধীনে ন্যস্ত হয়৷ এ সময়ে রোগমুক্ত রেশম ডিম উত্পাদন করার জন্য মীরগঞ্জ ও বগুড়া ছাড়া আরও ১০টি রেশম বীজাগার, রেশম চাষ বিস্তারের জন্য ২২টি রেশম সম্প্রসারণ ও প্রদর্শনী কেন্দ্র, রেশম চাষীদের উত্পাদিত রেশম গুটি ক্রয় এবং রেশম সামগ্রী তৈরীর জন্য রাজশাহী রেশম কারখানা এবং রেশমের উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট স্হাপন করা হয়৷ ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সমগ্র রেশম কার্যক্রম বিসিক-এর আওতায় পরিচালিত হ’তো৷ এ শিল্পের আরও বিকাশ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির ৬২ নং অধ্যাদেশের মাধ্যমে ‘‘বাংলাদেশ রেশম বোর্ড’’ প্রতিষ্ঠিত হয়৷ পরবর্তীতে ০৬ মার্চ/২০১৩ সালের ১৩ নং আইন বলে বাংলাদেশ রেশম বোর্ড, রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট এবং সিল্ক ফাউন্ডেশন এই ৩টি প্রতিষ্ঠানকে একীভুতকরণের মাধ্যমে পূর্ণগঠিত হয় “বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড” যা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। যার প্রধান কার্যালয় রাজশাহীতে অবস্থিত। ইহা একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। |
সত্যি ই আমি রেশম সম্পর্কে পড়ে অভিভূত। অনেক সুন্দর আমাদের রাজশাহী সিল্ক। আমি নিশ্চয়ই রাজশাহী সিল্ক নিয়ে কাজ করবো। এটি আমাদের ঐতিহ্য।